সকাল বেলা। মনে অন্যরকম এক অনুভূতি। কারণও ছিল যথেষ্ট—দৃষ্টিনন্দন, পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো সৌন্দর্য। শহরের কোলাহল ছাপিয়ে এখানে যেন এক শান্তির জগত।

প্রবেশের পর চোখে পড়ল শহিদ মিনার। ভিন্নধর্মী নকশার সুউচ্চ এই মিনারের পাশেই পলাশ গাছ। ডালে ডালে ঝুলছে লাল পলাশ ফুল—প্রকৃতির এক অনবদ্য উপহার। সেই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ফুল ছোঁয়ার চেষ্টা। উদ্দেশ্য, ভালোবাসার মানুষ—মায়ের জন্য কিছু ফুল তুলে নেওয়া।

মিনারের পাশেই একটি ক্যামেরায় ধরা হলো কিছু মুহূর্ত। পলাশ ফুলের পেছনে দাঁড়িয়ে নানা ভঙ্গিমায় তোলা ছবিগুলোয় জমে উঠল স্মৃতির রঙিন ফ্রেম। হেসে উঠল দিনটা।

বেলা বারোটার পর রোদ উঠল হালকাভাবে। ছায়াঘেরা পথ ধরে হেঁটে চলা। দু’পাশে সবুজ ঘাস, দূরে টিএসসি চত্বর, তার আশপাশে ফুলের বাগান। মৌমাছি আর প্রজাপতির মেলা যেন সেখানে। বাতাসে ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। ফুচকার দোকানে ক্ষণিক দাঁড়ানো—টক-মিষ্টি পানি আর গল্পের সুরে ভরে উঠল দুপুর।

এরপর গন্তব্য বোটানিক্যাল গার্ডেন। প্রবেশপথ থেকে শুরু করে প্রতিটি গাছপালা যেন পরিচিত হয়ে ওঠে নিজের নাম-পরিচয়ে। চোখে পড়ে ঔষধি, বনজ ও ফলজ গাছের বিশাল সংগ্রহ। স্বর্ণঅশোক, রক্তকরবী, হিজল, নাগলিঙ্গম থেকে শুরু করে হরেক প্রজাতির বিরল গাছ। বুনো আর গৃহপালিত গাছেরা পাশাপাশি বেড়ে উঠেছে। দ্বন্দ্বহীন, সম্প্রীতিময় এক বনজগৎ।

চারপাশে যখন এই সবুজে হারিয়ে যাওয়া, তখন পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। নদীর ওপারটা চর এলাকা। সেখানে বসতি, যাতায়াতের মাধ্যম নৌকা। নদীর কিনারে বসে সেই দৃশ্য দেখা, যেন স্বপ্নের কোনো সিনেমা।

বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা চলতে থাকল—নান্দনিক আবাসিক হল, আধুনিক অনুষদ ভবন, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, সমৃদ্ধ মিউজিয়াম আর সুবিশাল স্টেডিয়াম। সবখানে ছড়িয়ে আছে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের গন্ধ।

এক সময় আইসক্রিম কিনে নেওয়া হলো ছোট এক ফেরিওয়ালার কাছ থেকে। পাশেই এক বৃদ্ধা এসে সাহায্যের মিনতি জানালেন। তার হাতে দেওয়া হলো একটুখানি সহানুভূতি—নগদ অর্থ ও একটি আইসক্রিম। সেই হাসিমুখ, সেই চোখের পানি—দিনটার সবচেয়ে স্পর্শকাতর মুহূর্ত।

স্মৃতিস্তম্ভের সামনে আমগাছে ফুলের মুকুল। কাছে গিয়ে নিঃশ্বাস টেনে নিলাম সেই ঘ্রাণ। মাথার ওপর বাতাসে দুলে উঠছে চুল, মন ভেসে বেড়াচ্ছে অজানার দিকে। ধীরে ধীরে সূর্য হেলে পড়ল পশ্চিমে।

🛣️ যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। বাস বা ট্রেনে যেতে সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। ময়মনসিংহ শহরের শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ মোড় থেকে মাত্র ১০ টাকায় অটো রিকশায় পৌঁছে যেতে পারবেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন পুরো ক্যাম্পাস ও ব্রহ্মপুত্র পাড়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, একটি পরিপূর্ণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা হিসেবেও অনন্য। প্রকৃতি, শিক্ষা, ইতিহাস আর মানবিকতার স্পর্শে এক দিন হয়ে উঠতে পারে আজীবনের স্মৃতি।